— সাপ বানিয়েছে?
— না, এখন-ও বানায়নি। দেখছোনা রঙ হয়নি সব, বানানো হয়নি…
— বাবা, বাবা, দ্যাখো সিংহ বানিয়েছে, মহিষ বানিয়েছে, তা’লে সাপ বানায়নি কেন?
— বানাবে, কালকেই বানাবে (নিরুপায় পিতা’র উত্তর)
— সাপ কামড়ে দেবে তাই বানায়নি।
কচি গলায় ভার্ডিক্ট দিয়ে তিনি প্রস্থান করলেন।
ছবি তুলতে গিয়ে এরকম দু-তিনটে বাচ্চা’র দেখা পেলাম। বাবা বা মা’র সঙ্গে এসেছে ঠাকুর বানানো দেখতে। এরকম আমি-ও যেতাম। আঁকা’র স্কুল থেকে ফেরা’র পথে অথবা এমনি বিকেলে দোকানে বেরিয়ে টেনে টেনে নিয়ে যেতাম সঙ্গে যে থাকতো তাকেই, ঠাকুর বানানো দেখবো বলে বায়না করে। চুপ করে বেশ খানিকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখতাম। মাটি, তার্পিন তেল আর রঙের গন্ধ মিলেমিশে একটা অদ্ভুত মিশ্র গন্ধের সৃষ্টি হত। সে গন্ধটা অন্য কোথাও আর কখনো পেতাম না।
রোদ্দুরে’র একটা গন্ধ পাই এখনো মাঝে মাঝে; আকাশ পরিষ্কার এবং মন ভাল থাকলে। নাকি ওই গন্ধটা-ই মন ভাল করে দেয় হয়তো, কে জানে। মন ভাল রাখা এখন সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গড়িয়াহাট ব্রিজে’র নিচে যে পরিবারগুলো পার্মানেন্টলি বসবাস করে, সেখান দিয়ে সেদিন যাওয়া’র সময় একটা বাচ্চা ছেলে ভিক্ষা চাইলো। বললাম যে আমি পয়সা হাতে দেবোনা, কিছু খেতে চাইলে কিনে দিতে পারি। পয়সা হাতে পেলেই হয় এরা নিজেরা ডেন্ড্রাইট কিনে নেশা করবে নয়ত বাপ-মা কেড়ে নিয়ে সেই নেশা-ই করবে। আমি তাই পয়সা দিইনা। যাইহোক, একে সামনের একটা ফলে’র দোকান থেকে দুটো আপেল কিনে দিলাম, দু-হাতে নিয়ে চলে গেল। খানিক এগিয়েছি, জামায় টান। রোগাপানা, অপুষ্টি-তে ভোগা একটা বছর তেরো-চোদ্দ’র মেয়ে, কোলে আবার একটা বাচ্চা, ভাই হবে বোধহয়, পয়সা চাইছে।এদের নেটওয়ার্ক খুব ভাল, আগেও দেখেছি। একজনকে কিছু দিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালেই পরপর লাইন পড়ে যায়। কিন্তু মহা জ্বালা, এ আপেল খাবেনা, এর পুজোয় জামা হয়নি।
তাড়া ছিল, নিজের বিবেকের অল্প কামড় উপেক্ষা করে পঞ্চাশ-টা টাকা ধরিয়ে দিলাম হাতে। জানালাম, আমি পরে তার জন্য জামা নিয়ে আসবো। এর পর কেটে গেছে আজ নিয়ে বারো দিন। যাওয়া হয়নি আমার আর। হয়ত যখন যাবো, মেয়েটাকে খুঁজেই পাবোনা আর। কালো, রোগা, অপুষ্টিতে-ভোগা, সদ্য-জাগা নারীত্বের ছাপ লুকোতে সচেষ্ট কত্ত বাচ্চা এই শহরে ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চা বলে-ও ভাবেনা অনেকে তাদের, মেয়েমানুষ ভেবে হাত বাড়ায় ছেঁড়া জামা’র তলা দিয়ে। অবশ্য, এই নয় যে বাচ্চা ব’লে ছাড় আছে, তাও আর কী! মেয়েটা-কে জামা না দিতে পারা’র মন-খারাপ সারা পুজো-তে কুট্কুট্ করে কামড়াবে হয়ত, ঝেড়ে ফেলে নতুন জামা পরবো। ঠিক সেই মুহূর্তেই হয়তো, দেবী মায়ে’র আরাধনায় সামিল হওয়া’র চেষ্টায় নিজেকে খুলে দেবে ওই মেয়েটা কারো কাছে… কোন মায়ের পুজারী ভোগ খেয়ে এসে ভোগ করবেন 🙂 মা সর্বংসহা জগজ্জননী, আরো কত সহ্য করবেন কে জানে! ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ
Good.
ধন্যবাদ… 🙂
সত্যি, কোটি কোটি টাকার পূজার বাজেট … যা দেবি সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা … মৃন্ময়ী মাকে পূজা করছি আমরা সকলে অথচ এই চিন্ময়ীদের আমরা কতো সহজে ভুলে যাই … কখনো আবার আমরা মহাষাসুরের থেকেও অধম হয়ে যায়ি… ভুলে যাই আমাদের নিজস্ব পরিচয়…
সত্যি-ই তাই। হার্শ রিয়্যালিটি… 😦
sotti osadharon. emon kore ke aaj aar bhabe…
থেঙ্কু থেঙ্কু… 🙂