Posts Tagged ‘বাংলা গল্প’

gsrabani51_pic

ঠিক কীভাবে যে গাড়িটা স্কিড করেছিল ঠিকঠাক মনে করতে পারেনা কিছুতেই রচনা। পেছন পেছন আসা ট্রাকটার ওপর বোঝাই করা মাল ত্রিপল দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, ওপরে বসে আছে কয়েকজন ছোকরা গোছের খালাসী। মাঝেমধ্যেই তারা  সরস যৌনগন্ধী টিপ্পনী ছুঁড়ে দিচ্ছিল রচনাদের উদ্দেশ্যে। সেগুলো সব শোনা বা বোঝা না গেলেও অঙ্গভঙ্গি বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না দুজনের কারোরই।  মেজাজ হারাচ্ছিল অভি, রচনা কড়া চোখের ইশারায় বারণ করছিল রিঅ্যাক্ট করতে। দিনকাল ভাল নয়, কোত্থেকে কী হয় বলা যায়না…সন্ধ্যার ঝোঁকে এইসব রাস্তা, হাইওয়ে কানেক্টর বলা যায়,  খুব একটা ব্যস্ত নয়। হুশহাশ গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে, কেউ কারো সাহায্যের জন্য দাঁড়াবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই।

আসানসোল থেকে বেরোতেই দেরী হয়ে গিয়েছিল ওদের। রাতের আগেই কলকাতা ঢুকবে বলে অভি চালাচ্ছিলও বেশ ভাল স্পীডে, আর, আশ্চর্যজনকভাবে ট্রাকটা যেন ওদের ওভারটেক করতেই চাইছিল না।  এই রাস্তায় এভাবে ট্রাকের মাথায় বসে থাকা যথেষ্ট বিপজ্জনক- এই বোধও কী নেই ওদের! অভি দু-একবার সামান্য স্লো করে ইশারা করলেও পাত্তা দেয়নি ড্রাইভার। হাল ছেড়ে দিয়ে অভি যথাসম্ভব স্পীড তুলেছিল। হঠাৎ একটা বাঁকের পরেই আলো-ঝলমলে একটা ধাবা দেখে আচমকা ব্রেক কষেছিল, প্রায় পরক্ষণেই বিকট স্ক্রী-ই-ই-ই-চ-চ আওয়াজ তুলে ওদের নীলরঙা ওয়াগনারের রঙ চটিয়ে সেটাকে প্রায় উলটে দিয়ে সামনের বিরাট গাছটাতে ধাক্কা মেরেছিল ট্রাকটা। রচনা ওই স্ক্রী-ই-ই-ই-চ-চ অবধি মনে করতে পারে সব…তারপর অন্ধকার।

নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরার দুদিন পরে অভি বলেছিল ঘটনাটা। গাছে ধাক্কার অভিঘাতে উপরে বসা তিনজনই ছিট্‌কে পড়েছিল রাস্তায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেছন পেছন আসা আরেকটা লরী পিষে ফেলে ওদের।

“তুমি কি ইচ্ছে করেই ওভাবে ব্রেক কষেছিলে, অভি?”
আকুল স্বরে করা রচনার প্রশ্নটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল অভি।

“পাগল হয়ে গেছ নাকি? মানুষ খুন করেছি বলতে চাও? পুলিশ ইনভেস্টিগেশন হয়নি?… একশো আটরকম কথার জবাব দিতে হয়েছে…যারা ওখানে ছিল প্রত্যেকেই বলেছে দোষ ট্রাকটার…আর এখন কিনা তোমার কাছে এইসব আজগুবি কথা শুনতে হচ্ছে!!”

“কিন্তু…কিন্তু…তিনজন মারা গেছে… আর যে পেছনে ছিল? তার কী হল? বাঁচেনি না?”

হাঁ করে দু-সেকেন্ড রচনার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অভি ধীরে ধীরে বলে,
“আর কেউ ছিলনা ওপরে, তিনজন; ড্রাইভার আর তার পাশে আরেকজন ছিল, তারা সাঙ্ঘাতিক ইঞ্জিওর্ড”

“কী বলছো কী! আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম যখন ট্রাকটা আমাদের গাড়ির গা ঘেঁষে ছেঁচড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, পেছনে আরেকজন ছিল… কালো রঙের জামা-প্যান্ট, সাথে একটা কুকুর, সেটাও কালো রঙ…লাল জিভ বের করে পা চাটছিল… লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হাত নাড়ল…”

“স্টপ ইট, প্লীজ। তোমার এইসব গালগল্প শোনার মানসিকতা নেই আমার… ট্রমা আমারও আছে, রচনা, কিন্তু তাই বলে তোমার মতন মাথা খারাপ হয়ে যায়নি আমার…আই জাস্ট কান্ট টেক এনি মোর অভ দিস্‌ বুলশীট”

সেই শুরু।

*******

মাস সাতেক পর, রচনার ছোটকাকার পঁচাত্তর বছরের জন্মদিন খুব বড় করে পালন করা হবে বলে ওরা সব ভাইবোনেরা মিলে ডিসিশন নিল। এই কাকা অবিবাহিত, ভাইপো-ভাইঝিদের বড়ই প্রিয় এবং আদরের। ্সকাল থেকেই বাপের বাড়িতে রচনা। হই-হুল্লোড়, আড্ডা আর খাওয়া-দাওয়ার দাপটে সাত মাস আগে ঘটে যাওয়া ভয়ানক স্মৃতিটা মন থেকে ব্লটিং পেপার দিয়ে কেউ শুষে নিয়েছে যেন। অভিও দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে খুড়শ্বশুরের সঙ্গে বিয়ার নিয়ে বসে হাল্কা রসিকতা করে চলেছে…অন্যান্য জামাই, শালারাও সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মাঝে মাঝেই ছোটকাকার উদাত্ত হা-হা হাসির আওয়াজ ভেসে  আসছে দোতলার  হল থেকে। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রচনা ছুটল সদর দরজা খুলতে।

বড়পিসি বাতের ব্যথায় কেঁপেঝেঁপেও এসে হাজির হয়েছে। কত্তদিন বাদে দেখা…জড়িয়ে ধরে রচনা পিসিকে।

ঠিক সেই সময়েই চোখে পড়ে সদর দরজার উল্টোদিকের পাঁচিলে বসা লোকটাকে।

কালো রঙের জামা-প্যান্ট, সাথে একটা কালো কুকুর… লাল জিভ বের করল না কুকুরটা?…পা-টা কি চাটছে? লোকটা হাসছে…হাতটা নাড়বে বলে ওঠাচ্ছে … পিসির গায়ের ওপরেই এলিয়ে পড়ে রচনা।

..আবার অন্ধকার… আবার নার্সিংহোম।

তবে এবার আর একা ফেরা নয়, সঙ্গে ছিল ছোটকাকার বডি। পিসির আর্তনাদ শুনে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা স্লিপ করে যায় কাকার…ইন্ট্যারন্যাল হেমারেজ… কয়েক ঘন্টায় সব শেষ।

*******

অনেক চেষ্টা করেও অভিকে ঘটনাটা বলে উঠতে পারেনি রচনা। জানে যে, বিশ্বাস করবেনা, শুধু শুধু ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি…আজকাল একদম পারেনা এসব চাপ নিতে সে…

তিন দিন আগে, পাশের ফ্ল্যাটের মিসেস দেশাইয়ের ছেলের বাচ্চা হয়েছে শুনে দেখা করতে গেছিল। মিষ্টি, ফুট্‌ফুটে একটা পুতুল যেন মেয়েটা। খোলা জানালা দিয়ে সটান চোখ গেল সামনের ব্যালকনিতে।

আবার… মৃদু হাসল বোধহয়…কুকুরটা লোলুপ লোল জিহ্বা বের করে তাকিয়ে আছে।

ঝট্‌ করে চোখটা সরিয়ে নেয়… কিন্তু জানত কী হবে।

বাচ্চাটা দু-দিন পরে মারা গেল। টাইফয়েড হয়েছিল নাকি… বোঝা যায়নি।

********

অভি প্রথমে কোন কথাই বললনা কিছুক্ষণ। মাথা নীচু করে কিছু ভাবছিল। যখন মুখ তুলল, তখন দু-চোখে মায়া মাখানো।
“আমায় ভুল বুঝোনা প্লিজ, কিন্তু তুমি বুঝতে পারছনা কী সাঙ্ঘাতিক একটা মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে তুমি যাচ্ছ। আমি জানি রচনা, এই ধরণের অ্যাকসিডেন্টের পর অনেক সময়েই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে… আর তুমি তো কিছু বুঝতেই দাওনি কখনো…শুধু কয়েকবার ব্ল্যাক-আউট…যাইহোক, আমি কালই ডক্টর সোমের সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্স করছি, আমিও যাবো তোমার সঙ্গে…কিছু ভেবোনা,সোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।” হালকা করে একটা চুমু খায় অভি রচনার ভেজা গালে।

“আমি পাগল নই, অভি! মানসিক রোগ হয়নি আমার। আমি যা তোমাকে বললাম সব বর্ণে বর্ণে সত্যি। কীকরে বোঝাবো তোমাকে…লোকটা আসে, প্রতিবার, আমি জানি কিছু একটা ভয়ানক অমঙ্গল নিয়ে আসে ও…”

দুজনেই দুজনকে বোঝানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে চলে… শব্দ-প্রতিশব্দরা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ঘুরতে থাকে, ঘুরতেই থাকে। তারপর একসময় প্রবল বিস্ফোরণে আছড়ে পড়ে। মাথার ভেতর প্রতিটি শব্দ বিস্ফোরণে ছিটকে আসা লোহার টুকরো…গেঁথে যেতে থাকে রচনার মগজে… শিরায়-উপশিরায়।

“পাগল, তুমি পাগল…মানসিক রোগী তুমি”

*********

গতকাল রাত্রে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কখন যেন। টের পায়নি রচনা। এত ঘুম ঘুমোয় ও আজকাল যে কিছু টের পায়না। স্বপ্নও দেখেনা। কোথাও বেরোতে ভয় পায়। অভির সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় বন্ধ বললেই চলে। ডাক্তার দেখায়নি ও। কেন দ্যাখাবে? সব সত্যি, ও জানে…

তবুও আজ সকালটা অন্যরকম লাগছিল। অসময়ের বৃষ্টির ঝাপ্‌টায় বারান্দার গাছগুলো ভিজে চুপ্পুস। ইস্‌, জেগে থাকলে ও-ও দেখতে পেত, জলের ঝরোখার ওপারে ভিজতে থাকা  গাছগুলোর আনন্দ।  বহুদিন পরে হঠাৎ যেন বড় বেশী করে বাইরে বেরোতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। বলবে কি অভিকে তাড়াতাড়ি আসতে?

ঘোরটা কেটে যায় অভির গলার আওয়াজে। আজকাল আর বাড়িতে ব্রেকফাস্ট করেনা অভি, বাইরেই খেয়ে নেয়। শুধু বেরোনর আগে নিয়ম করে একটা কথা রোজ জিজ্ঞেস করে…আজও সেটাই বলছে।

“যাবে একবার ডক্টর সোমের কাছে? প্লীজ?”

দমকা হাওয়ায় টবের গোলাপ গাছটা দুলে ওঠে, দু-ফোঁটা জল ঢেলে দিয়ে যায় আদর করে হাতের ওপর। অভিকে চূড়ান্ত হতবাক করে মাথা নাড়ে রচনা, যাবে।

হতভম্ব হয়ে কোন কথা না বলে রচনাকে  শুধু জড়িয়ে ধরে অভি; “রেডি হয়ে থেকো, ঠিক ছ’টা।”

আজ অনেকদিন পরে অভির যাওয়ার সময় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ঠিক হয়ে যাবে সব, মনে মনে বলে সে।
ওই তো অভি গাড়ি বের করছে। বসলো স্টিয়ারিঙে…  হাত নাড়ছে হাসিমুখে।

অপস্রিয়মাণ গাড়িটার দিকে তাকাতে ঠিক তখনই…

পেছনে কালো জামা, কালো প্যান্ট পরা কে ও!

পাগলের মতন বেড্রুমে গিয়ে মোবাইলে অভির নাম্বার ডায়াল করে সে…আটকাতেই হবে অভিকে…

সামনে টেবিলে পড়ে থাকা অভির মোবাইলের রিংটোন ছাপিয়েও কানে আসে অনেক লোকের গলার আওয়াজ…অ-নে-ক  লো-ক… আর বীভৎস স্ক্রী-ই-ই-ই-চ-চ…।

“তুনে মারি এন্ট্রি অওর দিল মে বজী ঘন্টি”- সুরবালা ধড়মড় করিয়া প্রায় লাফাইয়া উঠিলেন। চক্ষু পুরোপুরি উন্মীলিত করিতে না পারার দরুণ প্রথমে বুঝিতে পারিতেছিলেন না শব্দের উৎসস্থল। “টং টং টং” অনুসরণ করিয়া কায়ক্লেশে বাম চক্ষুটি নিমীলিত করিয়া বুঝিতে পারিলেন, পরমপূজ্য পতিদেবের চলমান দূরভাষ হইতে এমত মধুর ধ্বনি ভাসিয়া আসিতেছে। ষড়যন্ত্রটি বুঝিতে আর বাকি রহিলনা। গতরাত্রে স্বামীদেবতা কহিয়াছিলেন যে, অদ্য রবিবার হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার বিশেষ কর্মযজ্ঞ রহিয়াছে, সুতরাং সুরবালা যেন রবিবাসরীয় প্রভাতের নিদ্রালস্য ত্যাগ করিয়া অতি অবশ্য তাঁহাকে ভোর ছয়টায় ডাকিয়া দেন এবং যদি সামান্য এক পেয়ালা চা তিনি দয়া করিয়া প্রস্তুত করিতে পারেন তাহা হইলে তাঁহার ঊর্ধ্বতন চৌদ্দপুরুষ সৌভাগ্য লাভ করিবেন- ইহাও জানাইয়াছিলেন।

ইহাতে সুরবালা সুললিত ঝঙ্কারসহ বলিয়াছিলেন, যাহার বিবাহ তাহার হুঁশ না থাকিলে পত্নী বা প্রতিবেশীগণকে কেহ দিব্যি দেয় নাই যে সে বা তাহারা তাঁহাকে ছাদনাতলায় বসিবার জন্য হাঁক পাড়িবে। বলাই বাহুল্য, এরপর উভয়ের কন্ঠস্বরই উচ্চগ্রামে ওঠে, এমনকি পুর্নবিবাহের প্রস্তাবও বিবেচ্য হয়। ইহার পর ক্লান্ত হইয়া সুরবালা শয়ন করেন, তাহার পর আর তাহার কিছু মনে নাই। ইত্যবসরে, পতিদেব নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে চলমান দূরভাষে এই কুকর্মটি করিয়া রাখিয়াছেন। সুরবালার নিদ্রা ভোরের দিকে অগভীর হইয়া পড়ে, এবং তাঁহার নিজেরটি সুগভীর হয়, ইহা তিনি সম্যক জ্ঞাত আছেন। ফলতঃ…

প্রবল গাত্রদাহ ও বক্র ওষ্ঠাধর  লইয়া মনে মনে ভয়াবহ কুবাক্য উচ্চারণ করিতে করিতে  মুখ পর্যন্ত না ধুইয়া কোনক্রমে চা প্রস্তুত করিয়া মিনিট দশেক পর যখন শয়নকক্ষে আসিয়া সুরবালা দেখিলেন তদবধি পতিদেব নিষ্ঠা সহকারে নিদ্রা যাইতেছেন। সুরবালার ওষ্ঠাধর বক্রতর হইল।

“চা” বলিয়া ঠকাৎ করিয়া তিনি পেয়ালা-পিরিচ নামাইয়া রাখিলেন এবং সূচালো নখাগ্র দিয়া শায়িত পতির পৃষ্ঠে  একটি মনোরম খোঁচা দিলেন।

“অঃকুঃ” জাতীয় কিছু বলিয়া পতিদেব পাশ ফিরিয়া শুইলেন।

এইবার প্রতিহিংসাপরায়ণ সুরবালার মনে হইল যে যথেষ্ট হইয়াছে; উঠিয়াছি, চা করিয়াছি, ডাকিয়াছি। আমার কর্তব্যকর্ম সমাপ্ত। আর ডাকিবনা। ইহা ভাবিয়া  এবং #হোক_দেরি থিওরি অবলম্বন করিয়া সুরবালা পুনরায় শয়নেই উদ্যোগ করিলেন।

একবার ভাঙিলে পুনরায় আবাহন করিয়া আনা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাও নিদ্রাদেবী হাসি হাসি মুখে প্রায় আসিব আসিব করিতেছেন এমন সময়, আবার! আবার! “তু লড়কী বিউটফুল কর গ্যয়ী চুল”…!!!!

ক্রোধে সুরবালা প্রায় অন্ধ, চলমান দূরভাষটি  ছুঁড়িয়া ফেলিবেন না ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন সে বিষয়ে মানসিক দোলাচলে ভুগিতেছেন, এমন সময় পতিদেব লম্ফ দিয়া উঠিয়া লড়কীর কন্ঠস্বর রোধ করিলেন।

সম্মুখে পেয়ালা-পিরিচ দেখিয়া যারপরনাই আহ্লাদিত হইয়া সুরবালা কে সুপ্রভাত জানাইলেন এবং পূর্বের এলার্মেই তিনি নিদ্রোত্থিতা হইয়াছেন দেখিয়া হর্ষ প্রকাশ করিলেন।

যাহার ছয়টায় উঠিবার কথা, ছয়টা বাজিয়া পঁয়তাল্লিশে উঠিয়া সে কীভাবে এমন নাচন-কোঁদন করে, সুরবালার এই প্রশ্নের জবাবে একটি দীর্ঘ বিজৃম্ভণ সহকারে তিনি বলিলেন যে, আটটা নাগাদ রওয়ানা হইলেই যথেষ্ট … দুই ঘন্টা আগে এলার্ম না দিলে এই সামান্য চা-টুকু তাহার জুটিতনা… কেহ কেহ সামান্য কষ্ট স্বীকার করিতে পারেনা…ইত্যাদি…

ইহার পর, সুরবালা যদি তপ্ত তৈলে নিক্ষিপ্ত বার্তাকুর ন্যায় জ্বলিয়া উঠিয়া, পতি পরম গুরু আপ্তবাক্য বিস্মৃত হইয়া, স্বামীকে বিজয় মাল্য’র ন্যায় ষড়যন্ত্রকারী, অনৃতভাষী এবং সুযোগসন্ধানী বলিয়া সম্বোধন করে, উহাকে দোষ দেওয়া যায় কী?

কলিযুগ হইলেও আমাদের বিশ্বাস, ভগবান আছেন, তিনি ইহার যোগ্য বিচার করিবেন।

-_- -_-