অথ সুরবালা কথা

Posted: মে 19, 2017 in গদ্য হাবিজাবি
ট্যাগসমূহ:, , ,

একটি প্রখ্যাত প্রসাধনী কোম্পানি সুরবালাকে তাহাদের কিছু  মূল্যবান সামগ্রী পাঠাইয়াছেন; উদ্দেশ্য, সুরবালা যেন সে সকল ব্যবহার করিয়া নিজের মতামত জানান। সুরবালার নিজেকে প্রথমে কেমন গিনিপিগ বোধ হইতেছিল। একবার ভাবিলেন, সবসুদ্ধ ব্যাগটি সোনা হেন মুখ করিয়া কাহাকেও পাচার করিবেন এবং যা-হয় একটা কিছু মতামত লিখিবেন। কিন্তু তাহার পর তিনি “বাহুবলী” দেখিলেন, হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করিলেন এবং ঠিক করিলেন যা হয় হইবে, একবার মাখিয়া দেখাই যাক!

সুরবালার পতিদেবতাটি সুবিধের নহেন। ফাঁক পাইলেই তিনি তির্যক মন্তব্য করিয়া সুরবালার ঝাঁ… অর্থাৎ গা-পিত্তি জ্বালাইয়া থাকেন। অতএব, সুরবালা ঠিক করিলেন, যে “মুখলেপন” বা ফেসপ্যাকটি আছে, উহা সকলে ঘুমাইয়া পড়িলে রাত্রে মাখিয়া দেখিবেন।  :/

সেইমত, গতকল্য রাত্রে মৃদু “ঘুরররর- ঘোঁত” শুরু হইতেই সুরবালা সতর্কভাবে খাট হইতে নামিয়া কৌটা খুলিয়া গোময় সদৃশ অর্ধতরল পদার্থটি মুখে মাখিতে শুরু করিলেন। দেখিতে খারাপ হইলেও উহার সুবাস বেশ মনোরম, সুরবালার কষ্ট হইতেছিল না। এর পর দেখিলেন কৌটার গায়ে লেখা আছে, মুখে লেপন লাগাইয়া বসিয়া থাকিতে হইবে যতক্ষণ না উহা শুকাইয়া যায়। দীর্ঘঃশ্বাস ফেলিয়া সুরবালা খাটে বসিয়া, টেবল-বাতি জ্বালাইয়া, বহুবার পড়া “হ্যারী পটার” পুনরায় পড়িতে আরম্ভ করিলেন।

এক্ষণে হ্যারী “সাপের ভাষা সাপের শিষ” সবেমাত্র আধো আধো বলিতে ও বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছে, এমন মাহেন্দ্রক্ষণে, পতিদেব সামান্য নড়িয়াচড়িয়া উঠিলেন। মাগ্‌ল বলিয়াই হয়ত, সুরবালা ইতিমধ্যে তাহার মুখে যে লেপন রহিয়াছে, উহার কথা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইয়াছিলেন। বেশ কয়েকবার মুখ চুলকাইয়া ফেলিবার ফলে যে বেশ সাদায়-কালোয় চিত্রবিচিত পট তাহার মুখে রচিত হইয়াছিল, সে বিষয়েও অবগত ছিলেন না।

সুতরাং,পতিদেব জল খাইবেন বলিয়া চোখ খুলিয়া পাশের টেবলে হাত বাড়াইলেন, সুরবালা বিরক্ত হইয়া নিজমুখের সম্মুখ হইতে বইটি সরাইয়া কড়া চোখে তাকাইলেন এবং……

“বাপ্‌রে, ডাইনি কোথাকার” বলিয়া পতিদেব লম্ফ দিয়া উঠিতে গিয়া জলের বোতল সহ ভূপতিত হইলেন 😦

তবে, তিনি চোট পান নাই এবং সুরবালা যথেষ্ট আমোদ পাইয়াছেন। ভাল ভাল কথা লিখিবেন প্রসাধনী সম্পর্কে, ঠিক করিয়া ফেলিয়াছেন।

মন্তব্য
  1. Trayee বলেছেন:

    Ha ha ha…:)) last kichu line e chomok diye tumi khub sundar bhabe golpo gulo finish kro..khub bhalo laglo pore..:))

  2. Jyotirmoy Sarkar বলেছেন:

    সাধু ভাষায় লেখার প্রচলন আজকাল অবলুপ্তির পথে, এহেন সময়ে আপনার সাধু ভাষায় লেখার দক্ষতা দেখিয়া যৎপরনাস্তি খুশি হইআছি, উপস্থাপনা সত্যই বড় সুন্দর, হাস্যরস রচনায় আপনি সিদ্ধহস্ত এ কথা স্বীকার করিতে হইবে।
    এরকম আরও লেখা পড়িবার জন্য উদগ্রীব হইয়া রহিলাম।

    • Maniparna Sengupta Majumder বলেছেন:

      আরে বাঃ, বাংলায় লিখিতে দেখিয়া যারপরনাই আহ্লাদিত হইলাম। তুমি তো বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিনটি ভাষাতেই সিদ্ধহস্ত… বড়ই প্রীত হইলাম, ভ্রাতা। 😀

      আচ্ছা, তোমার এই ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগটায় লিখছোনা আর? ঘুরে এলাম…নতুন লেখা পেলাম না… 😦

      • Jyotirmoy Sarkar বলেছেন:

        তোমার মতন ব্যক্তিতের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে সত্যি ভাল লাগছে ।
        গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে মস্তিষ্ক অবরুদ্ধ হয়ে গেছে আর আমি লেখনি রুদ্ধ…চিন্তাশক্তি কাজ করছে না, আশা করি শীঘ্রই লেখা শুরু করবো।

        সময় পেলে এই লেখাটা পড়ে দেখো…

        Mama Bhagne Pahar—Place of Wonders

    • Maniparna Sengupta Majumder বলেছেন:

      হাহাহা… বর্ষণ শুরু হইয়াছে, অতএব, তোমার মস্তকও শীতল হইয়াছে আশাকরি… 😀

      অবশ্যই পড়বো… 🙂

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.