কালীপুজোয় ভাসান যাচ্ছে সেই রবিবার থেকে। একটা কাজে গতকাল সন্ধ্যেবেলায় বেরোতে হয়েছিল, তা দেখি দু-পা অন্তত অন্তর ঠাকুর আর ভাসান। তা, পুজো যখন হয়েছে, ভাসান-ও হবে, সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু মাইরি, এ পুরো একটা আউট অভ দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাপার মনে হচ্ছিল!
একটা ভ্যান বা চারশো সাত; তার পেছনে মিনিমাম পঞ্চাশজন বিভিন্ন বয়সের মানুষ, তার সামনে গোটা পাঁচ-ছয় ঢাকী, ভ্যাঁপ্পোর ভোঁ ভ্যাঁপ্পোর ভোঁ করতে থাকা আরেকটা দল, যারা মার্চ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা, সঙ্গে তাসা পার্টি– যারা আবার অ-নে-ক সামনে থাকায় ঠিক কোন পাড়ার পুজোর সঙ্গে এসেছে বা কী বাজাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছেনা। এবার, প্রত্যেকটা দলে দশ-বারো জন আছে যারা নাচছে! তান্ডব + মোহিনীআট্যম + নাগিন ড্যান্স = ভাসান নাচ। তার মধ্যে আবার সারা মুখ সিঁদুরে মাখামাখি, সীতা-সাবিত্রী কে বলে সাইড হয়ে যা– এমন অবস্থা। মাঝে মাঝে কোথা থেকে একজন চিমড়েমার্কা লোক এসে নাচুড়েদের (এরকম শব্দ হয়না কিন্তু এদের দেখে এটাই মনে এল) মুখে সন্দেশ গুঁজে দিচ্ছে। সাইড দিয়ে যাওয়ার সময় বাংলা এবং বিদেশি, দুইয়ের গন্ধই পাওয়া যাচ্ছে। ইন ফ্যাক্ট, আলাদা করা যাচ্ছেনা, মিলেমিশে একটা বেশ সাররিয়াল গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে।
দু-তিনজন পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোক “অ্যাই, দিদিদের যেতে দে”, ” ন্না ন্না, দ্দাদা, এখন বাইক নিয়ে যাওয়া যাবেনা, ওই ডানদিকের গলি দিয়ে যান” ইত্যাদি বলছেন। নিষেধাজ্ঞার মা-মাসি করে দুমাদ্দুম বোম ফাটছে এবং কিছু উব্যার- ন্যাকা মামণি সেই শব্দে অস্কার পাওয়ার মতন করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অভিনয় করছে। একজন পুলিশকাকুকে দেখতে পেলাম, বেশ খারাপ লাগলো অসহায় মুখটা দেখে। যাইহোক, আমায় গম্ভীর মুখে ছবি তুলতে দেখে আমার সামনে এসে কয়েকজন নৃত্য প্রদর্শন করলো, আমিও তাদের ছবি তুলছি এমন ভাব দেখালাম তারপর, “দেখি ওপাশ থেকে ছবি তুলবো” বলতেই তারা তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে আমায় রাস্তা পেরোতে দিল। নইলে আরো দশ মিনিট ওখানেই হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। সবই মায়ের লীলা! রাস্তা পেরিয়ে পাশের গলিতে গিয়ে দই- ফুচকা খেলাম, আসলে, ওটাই কাজ ছিল, ওর জন্যেই বেরিয়েছিলাম …হেঁ হেঁ…খাওয়াই সব রে পাগলা!
দারুন লিখেছেন। ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। সত্যি ঠিক এই রকমই হয়। 🙂
চারশো সাত মানে তো ছোটা হাতি। বাংলা আর বিদেশি মালের গন্ধ মিলিয়ে সুরিয়াল ভাসান পরিবেশ। হা হা।