মাতাল সম্বন্ধে দু_চার কথা আমি যা জানি– পর্ব ১

Posted: নভেম্বর 17, 2018 in গদ্য হাবিজাবি
ট্যাগসমূহ:, , ,

মাতাল নিয়ে মহাভারত লেখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে-ও হবে, কিন্তু তবু-ও, তা যাকে বলে কালজয়ী। কিছু কিছু প্রবাদ সকলেই জানেন, যেমন, মাতাল ছেলে হলে লায়াবিলিটি আর মেয়ে হলে অ্যাসেট। মাতাল সর্বদা সত্যি কথা বলে। মাতাল যতটা মদ খায় তার ডবল খিস্তি খায়। মাতাল নিজের বাড়ি চিনতে পারেনা কিন্তু দশ হাত দূর থেকে গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারে বোতলে পিনকন আছে না টারজান ইত্যাদি প্রভৃতি। এছাড়া, মাতালের দয়া,  সংবেদনশীলতা এবং মাতালের গোঁ  সর্বজনবিদিত।

প্রভূত পুণ্য’র ফলে জীবনে বেশ কিছু মাতাল দেখা’র সৌভাগ্য হয়েছে আমার।এই সিরিজ সেই মহান মানব-মানবীদের দু-একটি কাহিনী বলার অক্ষম প্রচেষ্টা। 
প্রথম চরিত্র’র নাম, ধরা যাক,  চ্যাটার্জিদা।

ধুতি-পাঞ্জাবি পরা চ্যাটার্জিদা বাম এবং রাম  উভয়ের-ই ভক্ত ছিলেন যথাক্রমে সকালে এবং সন্ধেয়। একটি পুরোনো অ্যাম্বাসাডর গাড়ি ছিল তাঁদের পরিবারে, যেটি গ্যারেজে অন্য নতুন গাড়ি’র চাপে জায়গা না পেয়ে রাত্রে রাস্তাতেই থাকতো। চ্যাটার্জিদা রোজ রাত  সাড়ে-দশটা নাগাদ মালে’র ঠেক থেকে ফিরতেন রিক্শা করে। কদাচ গাড়ি ব্যবহার করতেন না। 
অ্যাম্বাসাডর-টা বলতে গেলে,  কালেভদ্রে ওনারা নিয়ে বেরোতেন। পাড়া’র রেসিডেন্ট নেড়ি, কালু, রাত হলেই গাড়িটা’র ভেতর ঢুকে ড্রাইভারের পাশের সিটে শুয়ে ঘুমোতো। হাগু-মুতু করেছে বলে শুনিনি কখনো। চ্যটার্জিদা রোজ রাতে সামান্য টলটলায়মান অবস্থায় গাড়িটা’র জানালা দিয়ে উঁকি মেরে কালু-কে দেখে গুডনাইট করতেন। 

দিব্যি চলছিল। 

এক রাতে কোথাও কিছু গণ্ডগোল হয়ে থাকবে। চ্যাটার্জিদা রিক্‌শা থেকে নেমেই যথারীতি কালু’র জানালা’র কাছে গেলেন এবং হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে বলতে লাগলেন…
“রোজ তুই বাড়ি যাবি বলে আমার ট্যাক্সিতে উঠিস কিন্তু তুই গরীব বলে, তোর পয়সা নেই বলে তোকে কেউ পৌঁছে দেয়না। আমায় তুই ক্ষমা কর্‌, ভাই। আজ আমি এর প্রায়শ্চিত্ত করবো, তোকে  তোর বাড়িতে ফিরিয়ে দেবো।” প্রসঙ্গতঃ, একসময় সত্যি-ই ওনাদের দশ-বারোটা ট্যাক্সি ভাড়া খাটতো। 

যাইহোক, সেই পূর্ণিমা রাতে কীভাবে কী হইয়াছিল তা আমরা অত জানিনা। শোনা যায়, চ্যাটার্জিদাকে ওরকম করতে দেখে কাঁচা ঘুম  ভেঙে কালু ভয়ানক ঘাবড়ে যায় প্রথমে। তা, অ্যানিম্যাল ইন্সটিঙ্কন্ট, বুঝেছিল যে প্রাণে বাঁচতে হ’লে চুপ করে থাকাই মঙ্গল। “ঘৌ” পর্যন্ত করেনি। কিন্তু শেষে যখন চ্যাটার্জিদা গাড়ি স্টার্ট মেরে প্রায় বড়রাস্তা’র মোড় অবধি চলে গেছেন, এবং কালুকে সিটবেল্ট পরানো’র চেষ্টা করছেন, তখন অ্যানিম্যাল ইন্সটিঙ্কন্ট পুনরায় বিপুলভাবে ট্রিগার করে। ফলতঃ, কালু প্রাণঘাতী “ঘৌ ঘৌ ঘোঁয়াক ঘোঁয়াক ঘাঁউ ঘাঁউ ঘাঁউ” করে চেঁচাতে চেঁচাতে গাড়ি’র জানালা দিয়ে লাফ মেরে তীরবেগে ছুটতে থাকে। মাতালের গোঁ, আগেই বলেছি– সুতরাং, চ্যাটার্জিদা’ও তার পেছনে পেছনে “খুচরো দিতে হবেনা, ওরে পয়সা দিতে হবেনা” ইত্যাদি বলে ছুটতে শুরু করেন। কালু’র চেঁচানিতে তার ভাই-বেরাদর সবাই জড়ো হয়ে যায় এবং তারা চ্যাটার্জিদা’র পেছনে ছোটা শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, কালু-চ্যাটার্জিদা-অন্য এক পাল কুকুর– এইভাবে রেস হচ্ছিল। এইসময় একটি পোঙ্গাপাকা কুকুরকূলের মিলখা সিং, সজোরে ছুটে গিয়ে চ্যাটার্জিদা’র ধুতি ধরে টান মারে, তিনি মুখ থুবড়ে পড়ে যান, তখন বাকিরা গিয়ে পুরো ধুতিটা খুলে, ছিঁড়ে ফালা-ফালা করে বিজয়গর্বে গলিতে ফেরত চলে যায়। “সকলি ফুরায়, ফুচকার প্রায়, পড়ে থাকে শালপাতা”– এই অমরবাণীটি’র মর্মার্থ নাকি সেই মুহূর্তে চ্যাটার্জিদা-কে দেখে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যাচ্ছিল। 

এর পরের ঘটনা মহাভারতের ন্যায় এবং বাহুল্য। 
অ্যাম্বাসাডর-টা মাসখানেক পরে বেচে দেওয়া হয়। 
কালু সেই যে সেই রাতে পাড়া ছেড়েছিল, আর তাকে কেউ দেখেনি। 


 

মন্তব্য
  1. uttamchakrabortyblog বলেছেন:

    খুব ভাল লাগল। বেশ মজার লেখা।

  2. Indrajit Roy Choudhury বলেছেন:

    রাম & বামের সম্পর্ক গভীর — কলেজে পড়াকালে সবাই রামভক্ত & বামপন্থী হয়ে থাকে। শালপাতার ন্যায় চ্যাটার্জীবাবুকে তবে কল্পনা করতে বেশ মজা আসছে। 🙂

Maniparna Sengupta Majumder এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.